নির্বাচনের আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা

a257

যুক্তরাষ্ট্রে ৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিন সোমবার নিউ ইয়র্ক, টেক্সাস এবং ভার্জিনিয়ায় আল কায়েদার হামলা হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তিন অঙ্গরাজ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা গতকাল এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ‘জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্কফোর্স’কে সতর্ক করেছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। খবর সিবিএস নিউজ ও মিরর।

সিবিএস নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক প্যাট মিল্টন একটি সূত্রের কথা উল্লেখ করে জানান, আগামী সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গরাজ্যে আল কায়েদা সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে ‘জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্কফোর্স’কে সতর্ক করেছে। নিউইয়র্ক, টেক্সাস ও ভার্জিনিয়ায় এ হামলা চালানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হামলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি। এরই মধ্যে এফবিআই এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন হামলার এ আশঙ্কাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। হামলার হুমকির বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না হলেও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। দেশটির কাউন্টারটেরোরিজম কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্বনের বার্তা দেয়া হয়েছে তাদের।

এফবিআইয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী ও কাউন্টারটেরোরিজম কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত যেকোনো হামলা মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত। স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রসহ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত এ-বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদান করছে এফবিআই। জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, এমন যেকোনো কিছু শনাক্তে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও একযোগে কাজ করা হচ্ছে।’

দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, ছুটির সময় ও বড় কোনো আয়োজনের আগে এমনিতেই সন্ত্রাসী হামলার হুমকি আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিকে ধর্তব্যে নিয়েই নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। গত সপ্তাহেই দেশটির স্থানীয় পুলিশ বিভাগকে ভোটকেন্দ্রগুলোয় হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়। ওই সতর্কতা বার্তায় এসব ভোটকেন্দ্রকে আত্মঘাতী হামলা চালানোর ‘আকর্ষণীয় স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাও। নির্বাচনের দিন ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে কোনো হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটলে তা নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। কারণ ভোটিং মেশিনগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত নয়। তবে এর প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। এর আগে গত আগস্টে অ্যারিজোনা ও ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে ভোটার নিবন্ধনে জালিয়াতির ঘটনা চিহ্নিত করার পর এফবিআই একটি সাধারণ সতর্কতা জারি করেছিল।

নির্বাচনের সময় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা এখন বলা হলেও কয়েক মাস ধরেই দেশটিতে নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে এ আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপেও উঠে এসেছে এমন আশঙ্কার কথা। কারণ ট্রাম্পের সমর্থকদের একটি বড় অংশ মনে করে— নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে ট্রাম্পকে হারিয়ে দেয়া হবে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থকদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে।

নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নানা আশঙ্কা দানা বাঁধছে। একদিকে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির পুনর্তদন্তের সূত্র ধরে কমে আসছে দুই প্রার্থীর ব্যবধান। আঁচ দিচ্ছে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোটিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা। অন্যদিকে বাড়ছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সংশয়। রয়েছে নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কাও। টুইন টাওয়ার হামলার মধ্য দিয়ে অতর্কিতে সন্ত্রাসী হামলার যে শুরু, তা এখন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হালের ইসলামিক স্টেট। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে-পরে কিংবা খোদ ভোটের দিনই কোথাও হামলা হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।