কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা স্মরণে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন শিয়া মতাবলম্বীরা।
বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে এ মিছিল বের হবে।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাতভর হোসাইনী দালানে চলে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান।
তবে গতবার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলার কারণে এবার হোসাইনী দালান ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আচার-অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের পরে ইমামবাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক’শ শিয়া মুসল্লি কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা স্মরণে ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করছেন বিভিন্ন রীতি-নীতি।
দেখা গেলো, তাজিয়া মিছিল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে ঘিরে হোসাইনী দালান এলাকা ও আশে-পাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া আর্চওয়ের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে পুরো হোসাইনী দালান ও আশপাশের সড়ক। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীয় সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
এবার আশুরা উপলক্ষে হোসাইনী দালানে প্রবেশে রয়েছে যথেষ্ট কড়াকড়ি। পুলিশের পাশাপাশি ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
রাত আড়াইটায় ইমামবাড়ার সামনে ‘হায় হোসেন’ বলে মাতম তোলেন শিয়া মুসলমানরা। এরআগে কারবালার ঘটনা নিয়ে মুরব্বিদের বয়ান শুনছিলেন তারা।
রাতের মাতন শেষে অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান পালন করে সকালে শেষ তাজিয়া মিছিল বের করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক এম এম ফিরোজ হোসাইন।
তিনি বলেন, সকাল ১০টায় মিছিলটি হোসাইনী দালান থেকে বের হয়ে বকশী বাজার লেন, কলপাড়, উমেশ দত্ত রোড, উর্দুরোড ঢাল, লালবাগ চৌরাস্তা, এমিতখানা রোড, আজিমপুর মেটারনিটি, নীলক্ষেত মোড়, সিটি কলেজ, ধানমন্ডি-২, রাইফেলস স্কয়ার হয়ে অস্থায়ী কারবালায় (বিজিবি সদর দপ্তরের গেটের উল্টো দিক) মিছিলটি শেষ হবে বলে জানান তিনি।
হোসাইনী দালানের অন্যতম সংগঠক ফিরোজ হোসাইন আরও জানান, গত বছর তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার কারণে নিরাপত্তা কড়াকড়ি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবক এ দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, এবার তাজিয়া মিছিলে পুলিশের নির্দেশনার কারণে জিঞ্জির, দাঁ, ছুরি, ঢোল, লাঠি, আগুন খেলাসহ অন্যান্য অস্ত্র বহন করা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ধারালো অস্ত্র বহনের দায়ে মঙ্গলবার বিকেলে ১৪ জনকে আটক করা হয়। তারা তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে এসেছিলেন। এছাড়া রাতে ইমামবাড়ার ভেতর থেকে সন্দেহভাজন আরো ৪ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের নাম-ঠিকানা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালে হোসাইনী দালাল এলাকায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুইজনের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ আহত হয়।