মেট্রোরেল মূল নির্মাণকাজ আগামী বছর, খোঁড়াখুঁড়ি শুরু

a236আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা মেট্রোরেলের মূল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এর আগে মেট্রোরেলের পথে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরাতে হবে। গত বুধবার রাতে আগারগাঁও থেকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমেই মেট্রোরেলের জন্য ব্যাপকভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে।

তবে সড়কে একটিমাত্র গর্ত করে মেট্রোরেলের পথে থাকা বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরানো হচ্ছে না বলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র জানায়, সাত-আটটি সংস্থা সড়কের মাঝখান দিয়ে এবং ফুটপাত ঘেঁষে আলাদা আলাদা গর্ত খুঁড়ে তাদের লাইন বসাবে। এতে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ, প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ও ব্যয় সবই বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারনিয়ন্ত্রিত একটি কোম্পানি। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, সেবা সংস্থার লাইন সরাতে সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাবে এই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মাত্র ২০১ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা।

মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। শুরু উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে; পল্লবী, রোকেয়া সরণি, ফার্মগেট, দোয়েল চত্বর ও প্রেসক্লাব হয়ে শেষ হবে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। পুরো মেট্রোরেলই হবে উড়ালপথে। পথে ১৬টি স্টেশন থাকবে। এই পথজুড়েই চলবে খোঁড়াখুঁড়ি। ২০১৯ সালের মধ্যে সরকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি অংশ ২০২১ সালের মধ্যে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএমটিসিএলের প্রধান মোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের একাংশ ২০১৯ সালের মধ্যেই চালু করা হবে। আর লাইন সরানোর ব্যয় বাড়লেও মূল প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। কারণ জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছিল, তা থেকে টাকা বেঁচে যাবে। সেটাই লাইন সরানোর কাজে ব্যয় হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং এই প্রকল্প চলাকালে দুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সর্বশেষ ২৮ জুনের বৈঠকে সব সেবা সংস্থার লাইন এক গর্তেই বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। ২২ আগস্ট প্রকল্প পরিচালকের সভাপতিত্বে পুনরায় সভা হয়। সেখানে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার পথে সড়কের দুপাশেই পিজিসিবিকে রাস্তা খনন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কারণ এই অংশে পিজিসিবির সবচেয়ে বেশি লাইন রয়েছে। অন্য সেবা সংস্থাগুলো পিজিসিবির করা গর্তেই তাদের লাইন বসাবে।

এ বিষয়েমোফাজ্জেল হোসেন বলেন, একটা গর্ত করে সব সংস্থার লাইন বসানোর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত আছে। তবে একেকটা সেবা সংস্থার কাজের ধরন, ঠিকাদার ও প্রযুক্তি আলাদা আলাদা। তাই সব ক্ষেত্রে তা মানা সম্ভব হবে না।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১২টি সেবা সংস্থা রয়েছে ঢাকায়। এর মধ্যে মেট্রোরেলের পথে আটটি সংস্থার লাইন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, পিজিসিবি, তিতাস, বিটিসিএল, গ্রামীণফোন, ফাইবার অ্যাট হোম। কিছু কিছু সংস্থার লাইন আর তোলা যাবে না। তাই আগের লাইন বাতিল করে নতুন লাইন বসাতে হবে। আর কিছু লাইন অক্ষত রেখে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।

মেট্রোরেলের জন্য বিদ্যমান সড়কের বিভাজক বরাবর প্রায় ৪০ ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। ১৬টি স্টেশনের স্থানে জায়গা আরও বেশি লাগবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কের ওপর ৬৭০টি পিলার বসবে। এসব পিলারের ওপরই হবে মেট্রোরেলের লাইন।

সেবা সংস্থার লাইন সরানোর ও নির্মাণকাজের কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাত ধরনের প্রস্তুতি কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে। পরামর্শকেরা সুপারিশ করেছে, প্রকল্প এলাকার ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে হবে। হকার উচ্ছেদের পর যাতে পুনরায় না বসতে পারে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প এলাকার সড়কে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে। সম্ভব হলে সড়কে একমুখী যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, একমুখী যান চলাচল ব্যস্ত সড়কে সম্ভব নয়। তবে পল্লবী থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পথ একমুখী করার পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো মেট্রোরেলের পথে রিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া পল্লবী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত শাটল বাসসেবা চালু, হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের সামনে দক্ষ জট ব্যবস্থাপনার পরামর্শ রয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো