শুল্ক ছাড় পাচ্ছে প্রসাধন পণ্য

a252প্রায় সব ধরনের বিদেশি প্রসাধন সামগ্রী আমদানির পর্যায়ে আগের চেয়ে কম শুল্ক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব পণ্য আমদানির ওপর সরাসরি শুল্ক হার না কমালেও আমদানি মূল্যের ওপর আরোপ করা শুল্ক হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপনের গেজেট জারি করেছে সংস্থাটি। ফলে দেশের বাজারে এসব সামগ্রীর দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে হরলিকস, কমপ্ল্যান, সেরেলাক, বাচ্চাদের ব্যাটারিচালিত খেলনার দামও। বাড়ানো হয়েছে তাসের দাম।

নারীর রূপচর্চায় প্রসাধন সামগ্রী ছাড়াও হাল্কা নাশতা, শিশুদের খাদ্যপণ্য, খেলনার ওপরও একইভাবে শুল্ক কমিয়েছে রাজস্ব বোর্ড। নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যবহার্য কিছু পণ্যের ক্ষেত্রেও ছাড় দিয়েছে সংস্থাটি। শাড়ি-লেহেঙ্গায় শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর কমানো না হলেও পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানির ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। সাধারণ লেহেঙ্গা ও শাড়ির আমদানি মূল্য আগের মতোই ২০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হবে। গর্জিয়াস শাড়ি ও লেহেঙ্গার ক্ষেত্রে এই হার ৪০ ডলার। আগে সাধারণ পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানির আমদানি মূল্য চার ডলার হিসেবে শুল্কায়ন করা হতো। এখন তা তিন ডলারে নামানো হয়েছে। গর্জিয়াস পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানির ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য ১০ ডলার থেকে আট ডলারে নামানো হয়েছে।

বিদেশ থেকে এ ধরনের পণ্যসামগ্রী আনার ক্ষেত্রে আমদানি মূল্যে বেশ হেরফের হয়। শুল্কায়নের সুবিধার্থে এনবিআর বিভিন্ন পণ্যে আমদানি শুল্ক হিসাবের ক্ষেত্রে ওই পণ্য আমদানিতে একটি সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করে।

গত ২ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ১ নভেম্বর পৃথক এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে তা সংশোধন করা হয়েছে। তাতে কসমেটিক্স, শিশুখাদ্য ও নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন শিল্পপণ্যের আমদানি মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে কয়েকটি পণ্যে।

প্রজ্ঞাপন দুটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আই শ্যাডো, আই লাইনার, আই ভ্রু পেন্সিল ও মাসকারা এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজির সর্বনিম্ন মূল্য ছয় ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হতো। আর এশিয়ার বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১০ ডলার। এখন এশিয়ার ক্ষেত্রে সাড়ে চার ডলার ও এশিয়ার বাইরের দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে সাত ডলার মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হবে।

আগের প্রজ্ঞাপনে চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা সুগন্ধি ও ট্রয়লেটিজের প্রতি কেজির মূল্য ছয় ডলার ধরা ছিল। তা এখন পাঁচ ডলার করা হয়েছে। চীন ও ভারত ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এগুলোর দাম ধরা হতো ১০ ডলার, যা আট ডলারে নামানো হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আমদানি করা সুগন্ধি ও ট্রয়লেটিজের মূল্যও ২০ ডলার থেকে ১৫ ডলারে নামানো হয়েছে।

এ ছাড়া মুখ, ত্বক ও শরীরে ব্যবহৃত ক্রিম, মেকআপ কিট ও ফাউন্ডেশনের ওপর শুল্কায়নের ক্ষেত্রেও আমদানি মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এত দিন এশিয়ার কোনো দেশ থেকে এমন ক্রিম আমদানিতে ছয় ডলার ও এশিয়ার বাইরের কোনো দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হতো। এখন এশিয়ার ক্ষেত্রে তা পাঁচ ডলার এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে আট ডলার মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হবে।

কিছুটা কমানো হয়েছে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের আমদানি মূল্যও। এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানি করা শ্যাম্পুর প্রতি কেজির মূল্য সাড়ে তিন ডলার থেকে কমিয়ে তিন ডলার এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে পাঁচ ডলার থেকে কমিয়ে চার ডলার ধরা হয়েছে। আর এশিয়ার কোনো দেশ থেকে আমদানি করা কন্ডিশনারের দর সাড়ে তিন ডলার থেকে কমিয়ে তিন ডলার এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে পাঁচ ডলার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে চার ডলার।

২ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপনে পুরুষের ব্যবহৃত প্রি-সেইভ জেল ও ফোম আমদানিতে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা ছিল এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে তিন ডলার ও অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে ছয় ডলার। নতুন প্রজ্ঞাপনে জেল ব্যবহারকারীদের আগের চেয়ে খরচ বাড়বে। কারণ ব্র্যান্ডেড কম্পানির জেল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য ধরা হবে ছয় ডলার এবং নন-ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে চার ডলার। তবে ব্র্যান্ডের ফোম আমদানি মূল্য তিন ডলার ও নন-ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে তা কেজিপ্রতি দুই ডলার বিবেচনা করে শুল্কায়ন করা হবে।

ডিওড্রেন্টস (রোল অন, বডি স্প্রে) আমদানিতে এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে তিন ডলার থেকে কমিয়ে আড়াই ডলার এবং অন্যান্য দেশের বেলায় ছয় ডলার থেকে কমিয়ে চার ডলার করা হয়েছে। একইভাবে এয়ারফ্রেশনার ও কার এয়ার ফ্রেশনারের দামও কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভ্যানিটি ব্যাগের মূল্য সামান্য বাড়িয়ে শুল্কায়ন করা হবে। তবে পার্টসের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় পাবেন ক্রেতারা। কারণ এত দিন ব্রান্ডেড ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নে মূল্য ধরা হতো পাঁচ ডলার ও নন-ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে দুই ডলার। এবারের প্রজ্ঞাপনে তা যথাক্রমে ছয় ডলার ও দুই ডলার ধরে শুল্কায়ন হবে। পার্টসের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডেড দুই ডলার এবং নন-ব্র্যান্ডে ৭০ সেন্ট ধরা হবে।

মশার কয়েল ও অ্যারোসল আমদানিতে প্রতি কেজির দাম দুই ডলার থেমে কমিয়ে করা হয়েছে এক ডলার ৭৫ সেন্ট এবং অ্যারোসলের ক্ষেত্রে তা হবে আড়াই ডলার।

বাচ্চাদের খাদ্যপণ্য সেরেলাক বা সমজাতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমেছে ৭৫ সেন্ট। একইভাবে ওভালটিন, হরলিকস, কমপ্ল্যানসহ সমজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কেজিতে আমদানি মূল্য সাড়ে ছয় ডলার থেকে কমিয়ে ছয় ডলার নির্ধারণ করেছে রাজস্ব বোর্ড। ব্র্যান্ডেড কম্পানির পটেটো চিপস আমদানি মূল্য কেজিতে কমেছে ৫০ সেন্ট। নন-ব্র্যান্ডেড চিপসের ক্ষেত্রে কমেছে এক ডলার।

বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগের আমদানি মূল্য এক ডলার ৬০ সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় ডলার এবং ট্রলি স্কুল ব্যাগের মূল্য দুই ডলার ২০ সেন্ট থেকে কমিয়ে দুই ডলার করা হয়েছে। বাচ্চাদের খেলনার মধ্যে ভারত ও চীন থেকে আমদানি করা ফিকশন টাইপের (ব্যাটারি ছাড়া) খেলনার আমদানি মূল্য আড়াই ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন ডলার ধরা হয়েছে। তবে ব্যাটারিচালিত খেলনার আমদানি মূল্য পাঁচ ডলার থেকে কমিয়ে চার ডলার করা হয়েছে। আর ব্যাটারিচালিত রিমোট নিয়ন্ত্রিত খেলনার মূল্য সাত ডলার থেকে কমিয়ে ছয় ডলার এবং রিচার্জেবল রিমোট কন্ট্রোল ব্যাটারিচালিত খেলনার মূল্য ৯ ডলার থেকে কমিয়ে আট ডলার করা হয়েছে।

এত দিন যেকোনো ধরনের তাস আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের (প্যাকেট) মূল্য ২০ সেন্ট ধরে শুল্কায়ন হতো। এখন কাগজের তৈরি তাসের প্রতি ইউনিটের মূল্য ২৫ সেন্ট ও অন্যান্য উপকরণে তৈরি তাসের মূল্য ৬০ সেন্ট ধরে শুল্কায়ন করা হবে।

অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাকৃতিক মধু আমদানি করলে প্রতি কেজির মূল্য সর্বনিম্ন আট ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হতো। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে তা ছিল পাঁচ ডলার। নতুন প্রজ্ঞাপনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্ত করে প্রাকৃতিক মধু আমদানিতে সর্বনিম্ন ছয় ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হবে। অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই দর তিন ডলার।

ফারমেন্টেড নয় এমন ব্র্যান্ডেড সবুজ চা (গ্রিন টি) আমদানির ওপর শুল্কায়নে আগে সর্বনিম্ন মূল্য ধরা হতো ১৫ ডলার, যা কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। নন-ব্র্যান্ডেড সবুজ চায়ের ক্ষেত্রেও তা ১২ ডলার থেকে কমিয়ে সাত ডলারে নামানো হয়েছে। আর বাল্ক আকারে আমদানি করা অন্যান্য সবুজ চা আমদানি মূল্য সাত ডলার থেকে কমিয়ে ছয় ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলের জুস, সবজির জুস কিংবা বিভিন্ন ফল ও সবজির মিক্সড জুসের আমদানি মূল্যও কমিয়ে নির্ধারণ করে শুল্কায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য এক ডলার কমিয়ে ধরা হবে দেড় ডলার। এ ছাড়া প্রতি কেজি সয়া সসের আমদানি মূল্য দুই ডলার থেকে কমিয়ে এক ডলার, টমেটো ক্যাচআপ ও টমেটোর তৈরি অন্যান্য সস দুই ডলার থেকে কমিয়ে এক ডলার ২৫ সেন্ট এবং প্রতি লিটার এনার্জি ড্রিংক আমদানিতে মূল্য দেড় ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হবে। এত দিন প্রতি লিটারের আমদানি মূল্য সর্বনিম্ন তিন ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হতো। সূত্র: কালের কন্ঠ