এবার পরিবেশবান্ধব পোশাকে ক্যাটরিনা

a128প্রা ক্তন প্রেমিক রণবীর কপূরের সঙ্গে পরদা-রসায়ন। অনুরাগ বসুর পরিচালনা। ছবির কাজ বার বার আটকে যাওয়া। এ সব ছাড়াও ‘জগ্গা জাসুস’ ছবিতে ক্যাটরিনা কাইফ আরেকটা কারণে আলোচনায় আসতে পারেন। ছবিতে যা জামাকাপড় পরেছেন তিনি, প্রায় সবই ইকো-ফ্রেন্ডলি। এক ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টোর থেকেই কেনা হয়েছে সেগুলো। ‘মামি’ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এক আলোচনাসভায় নিজেই জানিয়েছেন কথাটা। নায়িকার কথায়, ‘‘পোশাকগুলো খুব সিম্পল, র এবং অরগ্যানিক।’’
পরিবেশ-বান্ধব পোশাক এখন সবচেয়ে ফ্যাশনেব্‌ল। পুরনো জিনিস দিয়ে তৈরি নতুন ডিজাইন মাতাচ্ছে রানওয়ে।

কোনও কিছুই ফেলার নয়
স্কেচবোর্ডে আঁকা, ফ্যাব্রিক কেনা, তারপর সেগুলো জুড়ে ফেলা— অনেকেই ভাবেন, যে কোনও ডিজাইনার পোশাক এভাবেই তৈরি হয়। কিন্তু বেশ কিছু ডিজাইনার এখন আরও এক ধাপ আগে থেকে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি ঘুরে বেঁচে যাওয়া টুকরো কাপড় জড়ো করা থেকে শুরু হয় তাঁদের কাজ। তারপর জোগাড় করা কাপড় দিয়ে কীভাবে নতুন ডিজাইন তৈরি হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন এঁরা।
দিল্লির ডিজাইনার ব্র্যান্ড ‘ডুডলেজ’এর কর্ণধার কৃতী তুলার মতে, ‘‘বিষয়টা একটা পাজ্‌ল মেলানোর মতো। হাতে প্রথমে নানা রকম ফ্যাব্রিক আসে। সেই অনুযায়ী ভাবতে হয়, কীভাবে সেগুলো কোনও ডিজাইনে ব্যবহার করা যায়।’’ অনেক ডিজাইনার ব্র্যান্ডই এখন এই দিকে ঝুঁকছে। কারণ ফ্যাব্রিক থেকে কোনও পোশাক তৈরি করতে গেলে বাড়তি অনেক কাপড় বেঁচে যায়। সেগুলো নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।

অদ্বিতীয়ার আবেদন
আপসাইকেল্‌ড পোশাকের সবচেয়ে বড় আবেদন, এর অভিনবত্ব। সাধারণত, টুকরো কাপড় বা অন্যান্য জিনিস দিয়ে যে পোশাক তৈরি হয়, সেগুলো হুবহু একই রকম দ্বিতীয়বার তৈরি হওয়া সম্ভব হয় না। সে
দিক থেকে যে কোনও আপসাইকেল্‌ড পোশাক অভিনব। তাই এই পোশাকগুলোর চাহিদাও বেশি।

রিসাইকেল নয়, আপসাইকেল
পুরনো জিনিসকে নতুনভাবে ব্যবহার করাটা রিসাইকেল করা। এর সঙ্গে আপসাইকেলের ফারাক রয়েছে। বিষয়টা আমাদের দেশের ফ্যাশনে অপেক্ষাকৃতভাবে নতুন। অনেক ডিজাইনার বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়ে হয়তো এই প্রশিক্ষণ পেয়ে এখানে শুরু করছেন। আপসাইকেল মানে মূলত পুরনো জিনিসকে ভেঙে নতুনভাবে গড়ে এমন কিছু তৈরি করা, যার মূল্য আগের জিনিসের চেয়ে বেশি। ডিজাইনার করিশ্মা সহানি যেমন বিদেশে ফ্যাশন নিয়ে পড়ার সময় এই বিষয়টা শিখেছিলেন। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নিজের সব কালেকশনই এভাবে তৈরি করবেন তিনি। ‘‘একটা কালেকশন তৈরি করার সময় আমার যে জিনিসগুলো বেঁচে যায়, সেগুলো আমি কোনও না কোনওভাবে পরের কালেকশনে ঠিক ব্যবহার করে নিই। তাই কিছুই ফেলা যায় না,’’ বললেন করিশ্মা।

আপসাইকেল করেন যাঁরা

অমিত অগ্রবাল
টিপ তৈরির যে বাড়তি কাট-আউটটা পড়ে থাকে সেটা একটি কালেকশনে ব্যবহার করেছিলেন ডিজাইনার অমিত অগ্রবাল। সঙ্গে পুরনো স্টকিংস আর প্লাস্টিকের মাঝে ইক্কত আর বাটিক টেকনিক ব্যবহার করে চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। একাধিক বিন্দি কাট-আউট শিট পরপর ব্যবহার করে একটা বেশ ফিউচারিস্টিক টেক্সচার তৈরি করতে পেরেছিলেন অমিত।

আব্রাহাম অ্যান্ড ঠাকুর
পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে কাঁথা বোনার পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে উৎসাহিত হন এই ডিজাইনারদ্বয়। তাঁদের মনে হয়েছিল, পুরনো টুকরো কাপড় জুড়ে নতুন কাপড় তৈরির যে পদ্ধতি সেটা ভারতের প্রাচীনতম ‘রিসাইকেলে’র উপায়। তাই কাঁথা নিয়ে বিস্তারিত কাজ করেন দু’জনে। পাশাপাশি এক্স রে শিট, সফ্ট ড্রিঙ্কের ব্যবহৃত ক্যান, হুক, পিন, সব নিয়ে এমবেলিশমেন্ট তৈরি করেছিলেন দু’জনে।

ক শা
করিশ্মা সহানির ব্র্যান্ড ‘ক শা’ শুরু থেকেই আপসাইকেল করায় বিশ্বাসী। চটের বস্তা দিয়ে জ্যাকেট, পুরনো স্নিকার্স কেটে স্টিলেটোজ, টপ কেটে কার্ডিগান, কী না ট্রাই করেছেন করিশ্মা! পুরনো বেনারসী শাড়ির পাড় কেটে ওয়েস্টার্ন সিল্যুয়েট তৈরি করেছিলেন একটি কালেকশনে।

পেরো
ভিনটেজ র‌্যাফ লরেন জ্যাকেটে ব্যাজ আর বোতাম লাগিয়ে নতুন লুক তৈরি করেছিলেন ডিজাইনার অনীথ অরোরা। দেশবিদেশের পুরনো দোকান ঘুরে ভিনটেজ পোশাক বা ইউনিফর্ম জোগাড় করেন অনীথ। সেগুলোই আপসাইকেল করে নতুন অবতারে দেখা যায় অনীথের ব্র্যান্ড ‘পেরো’য়। সব পোশাকের যেন নিজস্ব একটা গল্প থাকে, সেই চেষ্টাই করেন ডিজাইনার।

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
জাপানি শব্দ ‘বোরো’ পারমিতার মূল মন্ত্র, যার মানে ‘এত ভাল, যে ফেলে দেওয়া যায় না’। ফ্যাশন উইকের অনেক সিজনেই কলকাতার ডিজাইনার পারমিতা এই ‘বোরো’ কালেকশন দেখিয়েছেন। তিনিও মনে করেন, আগের সিজনের বাড়তি ফ্যাব্রিক পরের কালেকশনে ব্যবহার করা উচিত। খাদি, মলমল আর সিল্কের উপর আজরখ বা বাগ প্রিন্টের টুকরো প্যাচ ব্যবহার করে নতুন টেক্সচার তৈরি করেছিলেন পারমিতা। অনেকেই পুরনো জিনিসের কদর করেন না। জঞ্জাল ভেবে ফেলে দেন। সেখানেই পারমিতার আপত্তি। পুরনো জিনিস দিয়েও যে অভিনব পোশাক তৈরি সম্ভব, সেটা বুঝিয়ে দিতে চান পারমিতা।