দাম বাড়ল রুটি-বিস্কুটের

a37সারা দেশে হস্তচালিত বেকারিতে উৎপাদিত রুটি, বিস্কুট ও কেকের দাম বাড়িয়েছেন বেকারির মালিকেরা। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি জানিয়েছে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে দাম গড়ে ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা কার্যকর হয়েছে ২০ অক্টোবর থেকে।
হস্তচালিত বেকারির এসব পণ্যের মূল ক্রেতা দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে শহরের রিকশাচালক, দিনমজুর, পরিবহনশ্রমিক, হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হালকা খাবারের জন্য এসব রুটি-বিস্কুটের ওপর নির্ভরশীল। তাঁরা দিনে কয়েক দফায় চায়ের সঙ্গে এসব হালকা খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। দেশে চার হাজারের বেশি হস্তচালিত বেকারিতে এসব পণ্য উৎপাদিত হয় বলে জানিয়েছে বেকারি মালিক সমিতি।
চায়ের টং দোকানে বন নামে পরিচিত একেবারে কম দামের রুটিটি এত দিন ৫ টাকা দরে বিক্রি হতো, এখন কিনতে হচ্ছে ৬ টাকা দিয়ে। এ ছাড়া ৭ টাকার রুটির দাম ৮ টাকা, ১০ টাকার রুটির দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে যে বিস্কুট প্রতিটি ৩ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটা ৪ টাকা করা হয়েছে। কেকের দামও ১ টাকা বেড়ে ৮ টাকা হয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু বেকারির মালিক দাম না বাড়িয়ে বিস্কুট, রুটি অথবা কেকের আকার ছোট করেছেন।
হস্তচালিত বেকারি মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, চিনি, ভোজ্যতেল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে চলতি বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো মূসক আদায় করছি না। সরকার মূসক শেষ পর্যন্ত আদায় করলে তখন আরেক দফা দাম বাড়বে।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কেজিপ্রতি ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত রুটি-বিস্কুটের ওপর থেকে মূসক অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেন। মালিক সমিতি দাম বাড়ানোর সঙ্গে মূসকের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করলেও রাজধানীতে বেকারির কয়েকজন মালিক জানিয়েছেন, জুলাইয়ের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীরা তাঁদের কাছে মূসক চাইছেন।
জানতে চাইলে রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার জাশান বেকারির মালিক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই থেকে মূসক দিতে হচ্ছে। এর আগে দিতে হতো না।
এদিকে, কম দামি রুটি-বিস্কুটের ওপর থেকে মূসক তুলে নিতে আন্দোলন করছেন বেকারির মালিকেরা। ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম নামের একটি সংগঠন মূসক কমানোর দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে বেকারি মালিক সমিতিও।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের সামনে শফিকুল ইসলামের চায়ের দোকানে সোমবার চা পান করছিলেন রিকশাচালক সুমন সরদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধরে দোকানদার বেশি দাম চাইছে। সরকার নাকি ভ্যাট (মূসক) বসিয়েছে।’ চায়ের দোকানদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বেকারির মালিকেরা দাম বাড়িয়েছে বলে তাঁদেরও বাড়াতে হয়েছে।
চিনির দামের কারণেও বিপাকে পড়েছেন বেকারির মালিকেরা। তাঁদের দাবি, এক বছর আগের তুলনায় এখন চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ। কদমতলীর মনি আক্তার বেকারির মালিক বোরহান উদ্দিন বলেন, আগে এক বস্তা চিনির দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। এখন সেটা ৩ হাজার ২০০ টাকা।
উল্লেখ্য, এখনকার দর ও কর হারে বিশ্ববাজার থেকে চিনি আমদানি হলে প্রতি কেজিতে সরকারের রাজস্ব দাঁড়াবে ২০ টাকা। বিশ্ববাজারে এখন চিনির দাম ৫০০ ডলারের ওপরে। বছরজুড়ে টনপ্রতি গড়ে ৪৬০ ডলার দরে চিনি আমদানি হলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে প্রায় ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা।
হস্তচালিত বেকারির পণ্যের দাম বাড়লেও বড় কোম্পানিগুলোর পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়নি। রাজধানীর কাজীপাড়ার চায়ের দোকানদার এমদাদুল হক বলেন, প্রাণসহ বিভিন্ন বড় কোম্পানি যেসব কনফেকশনারি পণ্য বিক্রি করে তার দাম বাড়েনি। সুত্র: প্রথম আলো